হাঁটতে গেলে পড়ে যেতে হয়। সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ভ্যান গাড়ি উল্টে পড়ে। সলিং করা সড়কে ইট হাতে হাতে চলে যাচ্ছে অনেকের বাড়ি। আবার পার্শ্ববর্তী নদী ভাঙনে রাস্তার সাথে ইট ও চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব কারণে বটিয়াঘাটা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সুন্দরমহল খেয়াঘাট সড়কটি আজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি দায়িত্ব অবহেলা, তদারকির অভাব ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেখা দিয়েছে এই সীমাহীন জনদুর্ভোগ।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা জুড়ে ভাঙাচোরা। বিভিন্ন স্থানে বড়ো বড়ো গর্ত। নদী ভাঙনের কারণে পূর্বের ইটের সলিং করা এ সড়কের অধিকাংশ স্থানের ইট নেই। যা আছে তা রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নদীর জোয়ারের স্রোতে প্রতিদিনই রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙে যাচ্ছে। অধিকাংশ স্থানে রাস্তা সরু হয়ে পড়েছে। রাস্তা দিয়ে বর্তমান যানবাহন চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় মুরগি ব্যবসায়ী মোঃ মোমরেজ বিশ্বাস বলেন, “রাস্তাটির অবস্থা এতই খারাপ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।”
খেয়াঘাট ইজারাদার আব্দুল রাজ্জাক বলেন, “ভাই কি বলব রাস্তার কথা। প্রতিদিন খেয়া দিয়ে হাজারো লোকজন পারাপার হয়ে থাকে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমন যে, যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে আসতে পারে না। রাস্তাটি সংস্কার এখন খুবই জরুরি।”
সুন্দর মহল আশ্রয় প্রকল্পের মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মিনারুল ইসলাম জানান, “রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় নামাজ পড়তে মুসল্লীদের মসজিদে আসা যাওয়ায় সমস্যা হয়।”
বাজার কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা মেহেদি হাসান বলেন, “কাজে এতই অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে যে, অল্প দিনের মধ্যেই রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করা দরকার।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে রাস্তাটি এখন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা না করলে রাস্তাটি বিলীন হয়ে যাবে।”
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বটিয়াঘাটা উপজেলার ৪নং সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন (১%) তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকার রাস্তা সংস্কারের বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরমহল পিচের রাস্তা থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ইটের সোলিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আশিক এন্টারপ্রাইজ।
কাজটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যা রত্না অধিকারী বলে জানা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজটি পরবর্তীতে তদারকির অভাব ও নিম্নমানের কাজের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই রাস্তাটির অবস্থায় পরিণত হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিএম এনামুল হক বলেন, “রাস্তা নির্মাণের আগে বেড়িবাঁধ না দেওয়ায় আজ এই অবস্থা। ভবিষ্যতে সংস্কারের আগে পাইলিং ও বেড়িবাঁধ দিতে হবে নইলে টিকবে না।”
সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন লিটু বলেন, “শুনেছি রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী। রাতের আঁধারে ইটগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙনের কারণে রাস্তার অনেক ইট নদীর মধ্যে পড়েছে। রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করতে হলে টেকসই একটি বেড়িবাঁধ দিতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিব।”
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমি নতুন এসেছি। তাই সব এলাকা এখনো ভালোভাবে চিনি না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
খুলনা গেজেট/এনএম

